আবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী-
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধের বাইরে দুযোর্গে মৃত্যুর ঝুকি মাথায় নিয়ে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ অরক্ষিত ভাবে বসবাস করছে। বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দূর্যোগও ঝড় জলোচ্ছাসের কবলে পড়ে গৃহহারা এসব লোকজন ঝুঁিক নিয়ে বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করলেও তাদেরকে পূর্ণবাসন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে গৃহহারা লোকজনের পূর্ণবাসন না হওয়ায় শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ওদের ঠাঁই হয়েছে বেড়ি বাঁেধর বাইরে উপকূলীয় চরাঞ্চলের খাস জায়গায়। এরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দূর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে এখনও বেঁেচ আছে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার ধলঘাট,মাতারবাড়ি ও কুতুবজোম ইউনিয়ন লন্ডভন্ড করে দেয় এবং প্রায় ১০ হাজার মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এসময় বসতবাড়ি ভেঙ্গে গিয়ে গৃহহারা হয়ে পড়ে কুতুবজোম,মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। পরে ১৯৯৭ ও ৯৮ সালে আরো দু’টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে কক্সবাাজারের এই উপকূলে। এরপর সিডর, বিজলী ও আইলায় আঘাত হানে। এতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায়। এরপর অনেকেই পূর্ণরায় বসতবাড়ি তৈরি করে বসবাস করলেও যাদের সম্বল নেই,তারা বেড়িবাঁধের বাইরে ঢালু ও চর এলাকায় বাঁেশর তৈরি ছোট্ট ছোট্ট ঝুপরী ঘরে মৃত্যুর ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করছে।
সরেজমিন পরির্দশনকালে দেখা যায়, উপজেলার মাতার বাড়ি ইউনিয়নের রাজঘাট, ওয়াপদা পাড়া,পশ্চিম ষাইটপাড়া, সাইরার ডেইল ও মগডেইল এলাকায় বেড়িবাঁেধর উপরে ও ঢালুতে কয়েক হাজার লোক মৃত্যুর ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করছে। এছাড়া ধলঘাট ইউনিয়নের সরইতলা উত্তর দিকে,নয়াঘোনা,সাপমারার ডেইল ও মহুরিঘোনার পাশে বাঁেধর উপর ও ঢালুতে কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করছে। সাগরে মাছ ধরা,লবণমাঠ ও মাছ শুকানোর শুটকি কাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এসব অসহায় লোকজন কোন রকম সংসার চালাচ্ছে। বাঁেধ বসবাসরত এসব লোকজন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব লোকজনের ভবিষ্যৎ কি তারা নিজেরাও জানেন না।
ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের একাধিক বানবাসি জানান, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায় তাদের। এরপর থাকারমত কোন রকম বাঁশের জোড়াতালি দিয়ে আরেকটি গৃহ নির্মাণ করে বসবাস করলেও আবার দূর্যোগের কবলে পড়ে ওই বসতবাড়িটিও ভেঙ্গে যায়। আরেকটি গৃহ নির্মাণ করার নেই কোন সামর্থ্য নাই। ফলে পূর্ণরায় গৃহ নির্মাণ করতে না পেরে মৃত্যুর ঝুঁিক নিয়ে বাঁধের ঢালুতে বসবাস করছে। হাজার হাজার বনবাসি।
তারা আক্ষেপের সুরে বলেন এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে আমাদেরকে পূর্নরবাসনের কথা বল্লেও যখন এরা নির্বাচিত হয় তখন আমাদের আর খেয়াল থাকে না। বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস হাজার হাজার লোকজন তাদেরকে পূর্ণবাসন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাঝে জোর দারী জানান।
এব্যাপারে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী রুহুল বলেন, এই এলাকার অন্তত তিন হাজার মানুষ বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া দূর্যোগের কবলে পড়ে গৃহহারা হয়ে বেড়িবাঁেধ আশ্রয় নিয়েছে। এসব লোকজন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই গৃহহারা লোকজনদের পূর্ণবাসন করা একান্ত প্রয়োজন।
ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া দূর্যোগের কবলে পড়ে ধলঘাট ইউনিয়নের সরইতলা উত্তর দিকে,নয়াঘোনা,সাপমারার ডেইল ও মহুরিঘোনা এলাকার কয়েক হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গিয়ে এখন গৃহহারা। এসব লোকজন বাঁেধর উপর ও ঢালুতে মৃত্যুর ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করলেও তাদেরকে পূর্ণবাসন করা জন্য স্থানীয় প্রশাসন কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে যেকোন মুহুর্তে বড় ধরণের দূর্যোগ হলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির আশংকা রয়েছে বলে তিনি জানান। অপরদিকে এছাড়া ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করছে।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, প্রথম পর্যায়ে দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ৬০ পরিবারকে জলবায়ু ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে গৃহ নির্মাণ করে তাদেরকে পূর্ণবাসন করা হয়েছে। তবে বাকি অন্যান্যদেরকে পর্যায়ক্রমে গৃণ নির্মাণের মাধ্যমে তাদেরকে পূর্ণবাসন করা হবে বলে জানান।
পাঠকের মতামত: